ডাক্তার বউয়ের মিষ্টি কান্ড
লেখক :ইমতিয়াজ হাসান মিয়াদ
৫ হাজার টাকায় কেনা সেকেন্ড হ্যান্ড ফোন টা বেজেই চলেছে,বেজেই চলেছে।কিন্তু "ত্রিভুজের" ঘুম ভাঙছে না।পাঠক নি:শ্চই এখন ভাবছেন পিথাগোরাসের উপপাদ্য থেকে উঠে এসে ত্রিভুজ এখানে কি করছে?আসলে আমাদের এই কাহিনীর নায়ক ত্রিভুজ কিবরিয়া।একজন বেকার,ভবঘুরে,ছন্নছাড়া কেউ কেউ আবার গাধা,হাদারাম,গবেট বলেও সম্মান করে সম্বোধন করে থাকেন এই মহামানবকে।ছয়বার ফোন এসে এসে মিসড্ কল হয়ে সপ্তমবার ঘুম ঘুম চোখে ফোন রিসিভ করে-
"হ্যালো!কুদ্দুস ভাই,ঘুমাচ্ছি-পড়ে ফোন করো"
ওই পাশ থেকে উত্তর এলো:
"ওই শয়তান,কালকে সারারাত কত কেজি গাজা খেয়েছিস?আমি কুদ্দুস ভাই?আজকে দেখা কর।পিটিয়ে তোর পিঠ যদি লাল না বানাইছি আমার নাম জিনিয়া না।
ভাবছেন জিনিয়া কে?ভীষণ মেধাবী মেডিকেল কলেজ থেকে পাশ করা একজন রূপসী নারী।তবে মেডিকেলের এর ছাত্রী হলেও মেজাজ টা খুব উত্তেজিত।আর তার উত্তেজনাটা ত্রিভুজের ওপর খানিকটা বেশি ই।বেচারা বেকার ছেলেটার ওপর এতটা নির্দয় হতে পারে এই মেয়েটি তা প্রকাশ করা যায় না।
তবে এই মেজাজী আচরণের পিছনে কিঞ্চিত কেমিস্ট্রি আছে।তবে তা ত্রিভুজের তরফ থেকে নয়।জিনিয়ার তরফ থেকে।বেকার,গাধা,উল্লুক টা এসব কেমিস্ট্রি বোঝেনা বলেই রাগের উদ্রেগ টা
দিনে দিনে প্রখরতর হচ্ছে।
ত্রিভুজ:ওহ!তুমি?আমি সত্যি বুঝতে পারিনি।কুদ্দুস ভাই মনে করেছিলাম।আচ্ছা তুমি এত সকালে ফোন দিলে যে?
কোন বিশেষ দরকার(বয়সে ত্রিভুজের থেকে ২ বছরের বড় জিনিয়া,তাই তাকে তুমি করেই ডাকে ত্রিভুজ)
জিনিয়া:ওসব কথা পড়ে হবে।আচ্ছা তোর কি লজ্জা শরম বলে কিছু নাই?এইচ.এস.সি পাশ করে পড়ালেখা তো বাদ দিলি।তার পর বেকার বসে ঘুমাচ্ছিস?কিছু কাজ টাজের তো চিন্তা কর।ভবিষ্যতে বউয়ের মাইর ছাড়া আর কিছু তোর কপালে নাই বুঝছিস?আচ্ছা যেই কাজের জন্য ফোন দিয়েছি,বাবাকে বলে একটা জব ম্যানেজ করেছি তোর জন্য।বাবার এক বন্ধুর বিশাল এক কেমিক্যাল ফ্যাক্টরি আছে।ওখানের ম্যানেজার পদে।হাজার হাজার গ্রাজুয়েট রা ঘুরেও ইন্টারভিউ পর্যন্ত যেতে পারেনা ওইখানে।তবে বাবাকে বলে তোর জন্য সুপারিস করে আঙ্কেল কে রাজী করিয়েছি।সব কাগজ পত্র নিয়ে চলে যা বিকালেই।ঠিকানা বলছি খাতায় লিখে নে।
ত্রিভুজ:আমার জন্য চাকরি যোগার করতে কে বললো তোমাকে?আমি চাকরি করবো না।
জিনিয়া:থাপ্পর দিয়া দাত যেই কয়টা আছে সব ফেলে দেবো।যা বলছি তাই কর।নাইলে আমি কিন্তু....
ত্রিভুজ:নাইলে কি?
জিনিয়া:নাইলে আমি মরে যাবো।বিষ খাবো।
{বলেই চিৎকার করে কান্না শুরু}
ফোনেই শুনতে পেল ত্রিভুজ সব।
ত্রিভুজ: আর..রে....রে আমি তো মজা করলাম শুধু।আমি এখনি যাচ্ছি।প্যান্ট টা পড়েই দৌড় মারছি।
জিনিয়া:কি!!! প্যান্ট পড়ে মানে?তুই কি প্যান্ট না পড়ে ঘুমাস? অসভ্য!!
ত্রিভুজ:আরে লুঙ্গি পড়ে ঘুমাই।বাইরে কি লুঙ্গি পড়ে যাব নাকি?
জিনিয়া:হইছে!বক বক থামিয়ে ফ্রেশ হয়ে কিছু খেয়ে পরে যা।তাড়াহুড়োর দরকার নেই।বিকাল পর্যন্ত সময় আছে।রাখছি।ফিরে ফোন দিস্।
ত্রিভুজ আর জিনিয়ার পরিচয় অনেক আগে থেকে।ত্রিভুজ হাফ প্যান্ট পরে ক্রিকেট খেলতে যেত মাঠে।তার পাশে বড় একটা বিল্ডিং জিনিয়াদের।পরিচয় ওখান থেকেই।আস্তে আস্তে ঘণিষ্ঠ হতে থাকে।ত্রিভুজ সাদাসিদা ও সরল বলেই ত্রিভুজকে অনেক পচ্ছন্দ করতো জিনিয়া।তবে বয়সে ছোট বলে কিছু বলতেও পারেনি কোনোদিন।আর ত্রিভুজটাও সেই লেভেলের গাধা।বোঝেনা কিছু।
বিকালে ত্রিভুজের ফোন পেয়ে রিসিভ করলো জিনিয়া।
ত্রিভুজ:গিয়েছিলাম।এখন খুশি?
জিনিয়া:মোটেই খুশি না।কাজ পেয়েছিস।এখন ভালোভাবে কাজ করবি।নাইলে খুন করে ফেলবো।যদি কোন এলিগেশন শুনেছি তোর নামে তাইলে খবর আছে তোর।
ত্রিভুজ:এরকম বদ্ধ জীবন ভালো লাগে না আমার।
জিনিয়া: কাজ করতে হবে তোকে ভালো করে।অন্তত আমার জন্য।আচ্ছা একটা কথার উত্তর দিবি?
ত্রিভুজ: কি উত্তর?
জিনিয়া:তুই কি সত্যিই কিছু বুঝতে পারিস না?
ত্রিভুজ:হ্যা!পারিতো।
জিনিয়া:তাহলে বল তো আমি কি বলতে চাই?
ত্রিভুজ:তুমি নিশ্চই জিজ্ঞাসা করবে এখন আমি প্যান্ট পরে আছি কিনা।
ত্রিভুজের কথা শুনে ওই পাশ থেকে বিকট শব্দে এক ঝাড়ি!!!!
জিনিয়া: গাধা,উল্লুক,শয়তান,গবেট দূর হ তুই।এই জিনিস বুঝিস তুই।আর কোনদিন ফোন দিবিনা তুই।
ড়্গ
বলেই ফোন কেটে দিল।
ত্রিভুজ ঝাড়ি খেয়ে আমতা আমতা করতে থাকলো।স্পশ্ট বুঝতে পারলো কিছু একটা ভুল করেছে।তবে ত্রিভুজ জানতো জিনিয়াকে বিকালে পার্কে পাওয়া যাবে।
যেভাবেই হোক গিয়ে ওর রাগ ভাঙ্গাতে হবে।
ফুলের দোকান থেকে ২০ টাকা দিয়ে দুইটা রজনীগন্ধা নিয়ে চলে গেল পার্কে।জিনিয়া বসে আছে একা।গিয়ে ফুল দিয়ে দাত কেলিয়ে বলে "আমি দু:খিত"
জিনিয়া:দাত বন্ধ কর।চুপচাপ বসে থাকতে পারলে বসে থাক।নাইলে বিদায় হ।
ত্রিভুজ:তুমি রাগ?
জিনিয়া:কার ওপর?তোর ওপর?রাগ মানুষের ওপর করা যায়।গাধা,হনুমান,উল্লুক দের ওপর না।
ত্রিভুজ:আগে এইটা সিওর হও আমি কি গাধা নাকি হনুমান নাকি উল্লুক?
জিনিয়া:মাথা গরম করিয়ে দিস না।পার্কের ভেতর ই কিন্তু কসে থাপ্পর দিবো।
ত্রিভুজ:জিনিয়া একটা কথা বলবো?
জীবনের প্রথম বার ত্রিভুজ জিনিয়াকে তার নাম ধরে ডাকলো।জিনিয়া নিজেই অবাক।অবাকের ভেতর ই বললো:বল
ত্রিভুজ: আমি তোমাকে ভালোবাসি।
জিনিয়া কথা শুনেই কষে একটা থাপ্পর দিল ত্রিভুজকে।সাথে সাথে কান্না শুরু করে জড়িয়ে ধরে বললো:যখন বুজিস ই তখন এমন করলি কেন আমার সাথে?গাধা,শয়তান।।।
ত্রিভুজ:বেকার ছেলের সাথে কি তোমার বাবা তোমাকে বিয়ে দেবে?ভয়তেই তো কিছু বলিনি।কিন্তু এখন তো আমি চাকরি করি।তাই বললাম।
জিনিয়া: বাসায় প্রস্তাব পাঠা আজকেই আমার।বাবাকে আমি ম্যানেজ করে নেব।যদি ভুলেও বলিস তুই এইস.এস.সি পাশ তাইলে ছুড়ি দিয়ে একদম জিহ্বা কেটে দেবো।বুঝলি???
১ বছর পর আজ
অবশেষে আজ ত্রিভুজ আর জিনিয়ার বিয়ে।
বাসর ঘরে ঢুকেই ত্রিভুজ দেখল জিনিয়া বসে বসে ওর ফোন চেক করছে।
ত্রিভুজ গিয়ে বসলো ওর পাশে।
ত্রিভুজ: ও ..ডাক্তার আমার ফোনে কি দেখো?
জিনিয়া বড় বড় চোখ করে ওর দিকে তাকিয়ে: তোর ফোনে এই গুলো কি?
ছি!ছি শয়তান,অসভ্য ফাজিল এইসব দেখিস তুই?
খবরদার যদি আমার সাথে কিছু করার ট্রাই করিস খুন করে ফেলবো।
ত্রিভুজ: এইসব মেয়েদের ছবি কই থেকে এলো আমার ফোনে?এইগুলাতো আমি ফোনে কখনো লোড করিনি।
জিনিয়া:তুই লোড না করলে কি এমনি এমনি চলে এলো?ভেবেছিস ডাক্তার মেয়ে বিয়ে করে এনেছিস আর এইসব হট হট ছবি দেখিয়ে আমাকে পটাবি?আমি এখনি আম্মুকে দেখাবো এগুলো।
বলবো দেখো তোমাদের জামাই এইসব দেখে।এমনিতে তো ভেজা বেড়াল হয়ে থাকে।কিন্তু নিচে দিয়ে আস্ত একটা নির্লজ্জ,বেহায়া,বেশরম।
ত্রিভুজ:হায় হায়!আম্মুকে কেন দেখাবে?আমি সত্যি বলছি এগুলো আমার না।
জিনিয়া: ওহ তাই?ঠিক আছে।তাইলে আমিও ওদের মত ওইভাবে ফটো তুলি?পরে সেটাও ফোনে রেখে দে।
ত্রিভুজ:ছি।ছি আমি এত খারাপ না।
জিনিয়া: ওলে বাবা লে..আমার সোনাবাবুটা একটু ও খারাপ না।কিন্তু বাবু বউয়ের সাথে থাকতে গেলে তো একটু খারাপ হতেই হবে।চল আজকে তোকে একটু খারাপ হওয়া শিখাই।
অত:পর ডাক্তারের কাছে ছাত্র ত্রিভুজের কেমিস্ট্রি শেখা শুরু..........
এভাবেই চলতে থাকে ত্রিভুজ ও জিনিয়ার দুষ্টু মিষ্টি সংসার।